ফাহরিয়া ফেরদৌস: ২০১২’তে সুনামির মতোই আমার জীবনে পরিবর্তন আসে, যা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি, বিয়েটা ঈদের ঠিক আগের দিন আমার মতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই ভেঙ্গে যায়। নিজের জীবনের এই ঘটনার কারণে এই সমস্যা নিয়ে যে মেয়েগুলো আমার পেশাগত জীবনে আসে তারা আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়, আর আমার অনেক বড় একটা সার্কেল আছে যারা আমার মতোই এই সমস্যার মোকাবেলা করছে, সবার প্রশ্ন কী করবো, তুমি কীভাবে বেঁচে আছো?
আমার কথা হলো, মরার তো কারণ নাই! যে মেয়েগুলোর ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে, তারা যখন আমার কাছে আসে তখন তাদের জন্য আমার খুব মায়া লাগে, কারণ তারা জানে না তাদের সামনে কত সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে! কত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, কেন বিয়ে ভাঙ্গলো, ছেলেমেয়ে নাই কেন?
সবাই যে হেয় করার জন্য জিজ্ঞাসা করে তা নয়। তবে ভেবেছি একটা কাগজে বিস্তারিত লিখে ব্যাগে রেখে দিবো, যে জিজ্ঞাসা করবে তাকে বের করে দিব, যেন পড়ে সব জানতে পারে, কখনো মনে হয় বলি, ভাই, ঐ লোককে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, কারণ এর উত্তর তার কাছে আছে!
Read More News
কোনো মানুষই তার জীবনে কোনকিছু নিয়মের বাইরে গিয়ে চিন্তা করে না, তারপরও মানুষের জীবনে আনএক্সপেকটেড অনেক কিছু ঘটে যায়, কেউই সেটার জন্য প্রস্তুত থাকে না, আমিও ছিলাম না। একদিন আমার মা আমাকে বলছিল যে, মাঝে মাঝে আমি ভাবি আমার বোকা মেয়েটার জীবনে এতোকিছু হবে ভাবিনি, সময় মানুষকে সব শিখিয়ে দেয়, মানুষের আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদ মানুষকে যুদ্ধ করতে শেখায়, বিপদের সময় মানুষের রূপ দেখা যায়, দূরের মানুষ নয় কাছের মানুষই কতো ফায়দা নেয়।
অনেকে আবার কাউকে অসম্মানিত হতে দেখেও তৃপ্তি পায়, তারই ধারাবাহিকতায় আমার দুই খালাতো বোন সুযোগের চরম ব্যবহার করলো, আমাকে এমন একটা অপ্রীতিকর অবস্থার মাঝে ফেললো, যা নিয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমার পিছনে এতো ঘটনা ঘটেছে, আমার কাছে এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা ছিল না, আবার কিছু কিছু জিনিসের ব্যাখ্যা থাকলেও সেটি কিভাবে বোঝাবো তার ভাষা জানা ছিল না, উপরন্তু আমি এতো মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলাম যে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার মতো আমার আসলে শক্তি ছিল না।
আর তারপর থেকেই আমি নিজেকে ব্যাখ্যা করা বন্ধ করে দিয়েছি, আর যদি খুব দরকার হয় তাহলে সত্যিটুকুই বলি, যা হবার হবে, যে নিতে পারবে নেবে, আর যে নিতে পারবে না, সেটা তার সমস্যা। আমি এমনিতেও মানুষকে খুব একটা বিচার করতাম না, আর নিজের জীবনের এই ঘটনার পর কাউকে বিচার করা এমনিতেই বন্ধ করে দিয়েছি। এতোটুকু বুঝেছি সবার কাজের পিছনেই কোনো না কোনো কারণ থাকে; এটা বোঝার পর এক্স-হাজবেন্ডকেও আমি আর অপরাধী ভাবি না, তার যুক্তিও ঠিক, কী পেয়েছে সে আমাকে বিয়ে করে, না সুন্দরি বউ, না শিল্পপতি বাবার কন্যা!
সঠিক, একদম সঠিক, সবারই জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। স্ট্রাগলের কথা লিখবো। আসলে আমার লেখাটি কারও সহানুভূতি পাবার জন্যে নয়, যারাই আমাকে সমবেদনা জানাচ্ছে তারা ভালোবাসে বলেই বলছে। আমি আমার সবটুকু নিয়ে অনেক খুশি। যে মেয়েগুলো আসে তারা ভাবে আমার কোনো সমস্যা হয়নি, আবার অনেকে জানে না যে এগুলো সমস্যা তৈরি করে! বাইরের মানুষ নয়, আত্মীয় দ্বারাও যে সমস্যায় পড়তে হয়, সেটা অজানা।
নতুন কারো সাথে পরিচয়ে আমি এই কেন যে বিয়েটি টিকলো না, এই কথার উত্তর দিতে দিতে ক্লান্তু। আমার মনে হয় আবার বিয়ে না করা পর্যন্ত এ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলবেই, তবে লিস্টে নতুন নতুন প্রশ্ন যোগ হচ্ছে, আমিও মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছি। এমন নয় যে, আমাকে বিরক্ত করার জন্যেই কথাগুলো বলা। মানুষ যদি স্বামী-সন্তান নিয়ে পোস্ট দিতে পারে, তাহলে ডিভোর্স নিয়ে কেন দেয়া যাবে না?
এটাও জীবনের অংশ। এখন প্রতিটি ঘরে এই সমস্যা আছে, কী ধরনের সমস্যা হয় সেটি জানানোর জন্য, আর আপনার পরিবারের যার সাথে ঘটছে তাকে কোনরকম অসম্মান না করার জন্যই লিখেছি। যদি সাহায্য করতে না পারেন তবে মেয়েটিকে ছেড়ে দিন, এমনও হতে পারে আপনার ফালতু কাজের কারণে অসম্মানবোধ করে মেয়েটি আত্মহত্যা করলো!! সবাই তো আমার মতো জীবন নিয়ে এতো লোভী নয়!!!