সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই জঙ্গিদের টার্গেট কিলিং

সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই জঙ্গিদের গোপন অপারেশন চলছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এক ধরনের ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ দেখিয়ে তারা নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কোন অবস্থাতেই জঙ্গিদের আস্তানায় হানা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এত কিছুর পরও জঙ্গিরা পাবনায় প্রকাশ্যে একজন আশ্রম সেবককে খুন করে জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের ‘টার্গেট কিলিং’ চলবেই।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৪৮ টি হামলার ঘটনায় অর্ধশত ব্যক্তি খুন হন। এদের মধ্যে শিক্ষক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত, সেবক, দর্জি, মুদি দোকানি, পুলিশ পরিবারের সদস্য রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। কিন্তু এসব হত্যার কয়েকটি ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতা কাউকেই আটক করতে পারেনি। এ ধরনের টার্গেট কিলিংয়ের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্কণ্ঠা বিরাজ করছে। সবার মনে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক কাজ করছে।
Read More News

গতকাল থেকে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই পাবনার হেমায়েতপুরে অনুকূল চন্দ্র সত্সর্গ আশ্রমের সেবক হত্যার ঘটনাটি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ ব্যাপারে চারটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, ভারত সরকারের দৃষ্টি বর্তমান সরকারের ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এসব টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনাগুলো গোয়েন্দা সংস্থা পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয়েছে যে চলতি বছরজুড়েই জঙ্গি সংগঠনগুলো এসব অপারেশন চালাবে। তবে জঙ্গি নির্মূলে ইতিমধ্যে কম্বিং অপারেশন শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে বিকল্প হিসাবে যৌথ বাহিনী দিয়ে অভিযান চালানো হবে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমানোর জন্য সারাদেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গিরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ঠিক না; বরং জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও সরকারকে বিপাকে ফেলতে একটি চক্র জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের দিয়ে এসব টার্গেট কিলিং করাচ্ছে। একেকটি গ্রুপ টার্গেট কিলিং করতে বেশ সময় নিচ্ছে। এর পেছনে অর্থেরও যোগান দেওয়া হচ্ছে। এতে কতিপয় রাজনৈতিক দলের ইন্ধন ও যোগসূত্র রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গি গ্রেফতারে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংগৃহীত তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্লেষণ করা হয় না। ফলে একেক গোয়েন্দা সংস্থা একেক রকম রিপোর্ট দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে যে এই টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনাকারী বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। এরাই জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দিয়ে টার্গেট কিলিং করে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীর, তামীর-উদ-দ্বীন ও কতিপয় মাদ্রাসা কেন্দ্রিক জঙ্গি সংগঠনের ছোট ছোট গ্রুপ এসব টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত। এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তথ্য প্রযুক্তিতে জ্ঞান অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা রয়েছে। দেশের বাইরের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এসব জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র রয়েছে। ওইসব গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনায় জঙ্গিরা টার্গেট কিলিংয়ে ব্যস্ত। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশের কতিপয় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ক্ষমতার লোভ দেখাচ্ছে বলেও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, উগ্রপন্থীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে না পারলে কোন প্রতিরোধই কাজে আসবে না। আর জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে শুধু পুলিশ নয়, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও একযোগে কাজ করতে হবে। শুধু পুলিশের একার পক্ষে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এসব টার্গেট কিলিং নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। পাশাপাশি বিজিবিও নামানো হয়েছে। কম্বিং অপারেশন চলছে। এসব অভিযানের ফলও শিগগিরই পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *