নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেই

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান টিভিপর্দা কাঁপিয়ে নিয়মিত হয়েছেন চলচ্চিত্রে। রুপালী পর্দায় নিজের অবস্থান তৈরি করার জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। শ্রম বিফলে যায়নি। এক এক করে বেশ কিছু ছবির নায়িকা হলেন জয়া। কে জানতো ছোটপর্দা থেকে এসে চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থানটা পাকা করে নেবেন তিনি। শুধু কি তাই? এক এক করে দুই দুইটি ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। এ অর্জনে সাময়িক তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও থেমে যাননি জয়া। বাংলাদেশে জয়া নামের এক অভিনেত্রী আছেন সে আওয়াজ পৌঁছে গেল পাশের দেশ কলকাতায়ও। খ্যাতিমান নির্মাতা অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘আবর্ত’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ডাক পান তিনি। জয়ার এরপরের গল্প সবারই জানা। ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ ও সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনী’র পর এখন  আবারও কলকাতার ছবিতে অভিনয় করছেন জয়া আহসান। এবারের ছবির বিষয় অ্যাডাল্ট ক্রাইম। এর নাম ‘ঈগলের চোখ’। ছবিটির গল্প লিখেছেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। নারীর পাশাপাশি একজন পুরুষ কীভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হন, তাই নিয়ে এর গল্প। ছবির মূল চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাকে দেখা যাবে বিষাণ চরিত্রে। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন মহিলার দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হতে একসময় আর নারীর প্রতি তার কোনো আকর্ষণ কাজ করে না। জয়া অভিনয় করেছেন বিষাণের স্ত্রী শিবাঙ্গী চরিত্রে। এ ছবিতে আরও আছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার ও গৌরব চক্রবর্তী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ ছবির দৃশ্যায়ন শুরু হয়। জয়া অভিনেত্রী হলেও এর আগে নাচ ও গানের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। রবীন্দ্রসংগীতের ওপর ডিপ্লোমা এবং আধুনিক সংগীতের ওপর প্রশিক্ষণও নেয়া আছে তার। কিন্তু এখন অভিনয়ই জয়ার নেশা। অভিনয়ের মাধ্যমেই একটির পর আরেকটি চরিত্রে তিনি হাজির হন নতুন ভঙ্গিতে, নতুন চরিত্র হয়ে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, কলকাতার দর্শকরাও তার ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন। ঠিক যেন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী
নিজেই জয়া। ছবির শুটিংয়ে এখন কলকাতায় আছেন তিনি। আবার শুটিং শেষ হলে ঢাকায় আসবেন। ঢাকা-কলকাতা আসা-যাওয়াটা যেন জয়ার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর তাই পৃথিবীর অনেক দেশ ঘোরা হলেও ঢাকার পর কলকাতা শহরটিই তার কাছে বেশি ভালো লাগে। এ প্রসঙ্গে সমপ্রতি এক সাক্ষাৎকারে জয়া বলেছিলেন, ঢাকার পর আমার প্রিয় শহর কলকাতা। প্রায় সারা পৃথিবীতেই তো ঘুরেছি, কিন্তু এ শহরে এলে মনে হয়, নিজের দেশেই আছি। শহর হিসেবে কলকাতার উষ্ণতা, মানুষের আন্তরিকতা সবই মুগ্ধ করার মতো। এদিকে এ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নূরুল আলম আতিকের পরিচালনায় ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র কাজ শুরু করবেন জয়া। এতে তার চরিত্রের নাম পদ্ম। নতুন এ ছবিটি নিয়েও দারুণ আশাবাদী জয়া। তিনি জানান, আমাদের দেশের মেধাবী পরিচালকদের মধ্যে একজন নূরুল আলম আতিক। তার পরিচালনায় ‘ডুবসাঁতার’ ছাড়াও অনেক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছি। আতিকের এই গল্পটিও অসাধারণ। ফলে বলতে পারি, ভিন্ন ধরনের কাজ হবে। কলকাতা থেকে ফিরে এর দৃশ্যধারণে অংশ নেবো। এদিকে জয়া অভিনীত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-টু’ মুক্তি পাবে আগামী ৮ই এপ্রিল। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিব খান। ছবিটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ আলোচনাও তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তি এটি। রুম্মন রশীদ খানের কাহিনী ও চিত্রনাট্যে এটি পরিচালনায় ছিলেন সাফিউদ্দিন সাফি। ফ্রেন্ডজ মুভিজ ইন্টারন্যাশনাল প্রযোজিত এবারের প্রেমকাহিনীরও গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেছেন রুম্মান রশীদ খান। শাকিব-জয়া ছাড়াও আছেন ইমন, মৌসুমী হামিদ, ওমর সানীসহ অনেকে। কিছুদিন আগে জয়া শেষ করেছেন দেশভাগের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘খাঁচা’ নামে একটি ছবির কাজ। হাসান আজিজুল হকের ‘খাঁচা’ গল্প নিয়ে নির্মাণ হয়েছে ছবিটি। ২০১১-১২ সালে সরকারি অনুদান পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেছেন আকরাম খান। জয়া বাণিজ্যিক ঘরানায়ও সফল, তার প্রমাণ দিয়েছেন ‘চোরাবালি’, ‘জিরো ডিগ্রী’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’র মতো ছবিতে। জয়া নিজেকেই নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে কলকাতা আর বাংলাদেশ দুই জায়গায়ই সমানতালে অভিনয় করে যাচ্ছেন।
Read More News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *