ইউপিতে বিকৃত নির্বাচন হয়েছে : সুজন

চলমান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনকে ‘বিকৃত’ নির্বাচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: দৃশ্যপট ও শিক্ষণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন এ মন্তব্য করেন। সংস্থাটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের প্রধান মানদণ্ডের কোনোটিই পরিপালন হয়নি এ নির্বাচনে। প্রথম ধাপে বিকৃত নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনকে বিকৃত বলার প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এতকাল মনোনয়ন বাণিজ্য ছিল উপরের তলায়, এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য তৃণমূলে ছড়িয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবারের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা নিকট অতীতের সব নিবাচনের সহিংসতার মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকট। এবারের নির্বাচনে সহিংসতার ধরনও ভিন্ন। আগে নির্বাচনের দিনে সহিংসতা ঘটতো, কিন্তু এবার সহিংসতা দীর্ঘমেয়াদি এবং সহিংসতা দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের মধ্যে বেশি। তৃতীয়ত, নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, কিন্তু এবারের নির্বাচন ছিল প্রায় প্রতিযোগিতাহীন। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের যে হার তাই এ নির্বাচনকে বিকৃত নির্বাচন বলাই স্বাভাবিক। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
Read More News

নির্বাচনী সহিংসতার পুরো কমিশনের। এ দায় নিয়েই তা মোকাবেলায় ইসিকে কাজ করতে হবে। সাহসী পদক্ষেপ নিতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত। কমিশন বলেছে তারা ব্যর্থতার দায় নেবে না। এখন কমিশন যদি দায় না নেয় এ দায় কে নেবে? সুজন সম্পাদক বলেন, যদি পুলিশ ও সরকার তাদের সহযোগীতা না করে তবে তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সাফ জানিয়ে দিতে পারে ইসি এই নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব ইসির নয়, তারা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নির্বাচন আয়োজন করে থাকে। তিনি বলেন, সরকার, প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন যদি সম্মিলিত সুষ্ঠু ভোট না চায় তবে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব না। আগামীর যেকোনো ভোটে এই তিনপক্ষের সমন্বয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হলো ৭১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ৩৬টি জেলায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৩২টিতেই সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচনের দিনেই বিভিন্ন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। তিনি আরো বলেন, অনিয়মের কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয় ৬৫টি কেন্দ্রে। ভোটগ্রহণ নির্বাচনের পরের দুইদিনে নির্বাচনের দিনে আহত আরো তিনজন-সহ নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ছয়জন। আহতদের মধ্যে শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের পূর্বেই সারাদেশের অনেক এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন দুই সহস্রাধিক। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৭ এবং আহত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, অনেক স্থানের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বাধা দান, কেড়ে নেয়া বা ছিঁড়ে ফেলার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। কেউ কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও চাপ সৃষ্টির কারণে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। ছোট-খাটো বা সংশোধনযোগ্য ত্রুটির কারণে যাচাই-বাছাই কালে বাতিল হয়ে গেছে অনেকের মনোনয়নপত্র। ফলে একদিকে যেমন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ব্যাপকহারে (৫৪টি) ঘটেছে, অন্যদিকে ব্যাপক সংখ্যক ইউনিয়নে (১২১টি) বিএনপির প্রার্থী না থাকার ঘটনা ঘটেছে।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন তথা সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। একইসাথে রাজনৈতিক দলের সদাচারণও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দায় নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে যে, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তারাই। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব। আমরা সকলেই মনে করি যে, নির্বাচন কমিশনকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *