এক যুগ পার করল র‌্যাব

এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে গতকাল। প্রতিষ্ঠার একযুগ পার করল জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্য পাওয়া বিশেষ এ সংস্থাটি। এ সাফল্য অর্জনে র‌্যাবকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। সাফল্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ সেøাগানে অন্ধকারে আলোকবর্তিকা রূপে যাত্রা শুরু করে পুলিশের বিশেষায়িত এ বাহিনী। তবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ক্রসফায়ার নিয়ে সমালোচিত হওয়া সংস্থাটিকে সবচেয়ে বেশি সংকটে ফেলে দেয় নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা। এমন সব কর্মকা-ের প্রেক্ষাপটে যুগপূর্তি উদযাপন উপলে র‌্যাব সদর দপ্তর ৩ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করে।
Read More News

এদিকে বিভিন্ন বাহিনী থেকে র‌্যাবে আসা সদস্যরা কোনো অপরাধ করলে অভিন্ন আইনে শাস্তির বিধান চালুর দাবি জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব বলছে, র‌্যাবের কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে চিঠি লিখে মাতৃবাহিনীকে জানানো হয়। এ নিয়ে চিঠি চালাচালি করতে গিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। র‌্যাব মহাপরিচালক নিজ বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমনই আইন চাওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত র‌্যাবের সার্বিক সমন্বয় বিষয়ক এক সভায় এ দাবি জানানো হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা মনে করি, অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছে র‌্যাব। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বেশ কিছু বিষয়ে র‌্যাবের অর্জন অনেক। নিজেদের কর্মকা-ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে সংস্থাটি। মানুষের ভালবাসায় অনেক দূর যেতে চায় র‌্যাব।

পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় র‌্যাব। ২০০৪ সালে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা জেএমবি এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উগ্রপন্থি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে র‌্যাব ভূমিকা পালন করেছে। জেএমবির বিস্তৃত শাখা-প্রশাখাকে র‌্যাব প্রায় সমূলেই উৎপাটন করে ফেলেছে। এছাড়া বিভিন্ন মাদক প্রতিরোধ থেকে শুরু করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারেও র‌্যাবের ব্যাপক সাফল্য রয়েছে।

২০০৬ সালে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ, আত্মঘাতী হামলায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গি আতঙ্ক। ওই সময় শ্বাসরুদ্ধকর পৃথক দুটি অপারেশন পরিচালনা করে র‌্যাব। একটি ‘অপারেশন মুক্তাগাছা’ অন্যটি ‘অপারেশন সূর্যদীঘল বাড়ি’ নামে পরিচিত। এ অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইকে।

কার্যক্রম শুরুর সময় সদর দপ্তরসহ ব্যাটালিয়ন ছিল সাতটি। জনবল ছিল ৫ হাজার ৫২১ জন। প্রয়োজনের তাগিদে বেড়েছে র‌্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। এখন ১৪টি ব্যাটালিয়নে প্রায় সাড়ে আট হাজার র‌্যাব সদস্য কর্মরত।

১২ বছরে র‌্যাবের সাফল্য অনেক। কিছু ঘটনায় সমালোচিতও হয়েছে। চট্টগ্রামে দরবারের টাকা লুট, কলেজ ছাত্র লিমনের পায়ে গুলি ও নারায়াণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।

র‌্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১২ বছরে (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সাল পর্যন্ত) সারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭০ জনকে তারা গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৭১ জন জেএমবি ও হুজিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য রয়েছে। অভিযানে গত এক দশকে ৮ হাজার ৭০৬ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী উচ্চ বিস্ফোরক ৩৩৪টি, ১২ হাজার ৪৬০টি অস্ত্র, ১ লাখ ৮১ হাজার ২২৫ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৮ হাজার ৩৮৯টি ককটেল, বোমা, গ্রেনেড এবং ৫ হাজার ৪৬০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার, মাদক উদ্ধারের মধ্য দিয়ে মাদকবিরোধী ইমেজ গড়ে তুলেছে সংস্থাটি। ভেজাল খাদ্য, ওষুধ, রক্ত, হারবাল, ভেজাল কসমেটিকস্, ফরমালিন, ভুয়া ডাক্তার ও বন্যপ্রাণী বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে র‌্যাব।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৪ সালে ৫৪, ২০০৫ সালে ১০৬, ২০০৬ সালে ১০৯, ২০০৭ সালে ৮১, ২০০৮ সালে ৬৩, ২০০৯ সালে ৩৮, ২০১০ সালে ৪২, ২০১১ সালে ২৩, ২০১২ সালে ৪৫, ২০১৩ সালে ৩৫, ২০১৪ সালে ২২ ও ২০১৫ থেকে এ বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ১৪ জন ক্রসফায়ার, লাইন অব ফায়ার, গুলিবিনিময় এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। র‌্যাবের দাবি, নিহতদের বেশিরভাগই দণি-পশ্চিমাঞ্চলের নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের সদস্য, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী ও সুন্দরবনের জলদস্যু।

২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র‌্যাব জনসাধারণের সামনে আত্মপ্রকাশ করে। অপারেশনের দায়িত্ব পায় ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল। রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কলো পোশাকের সংস্থাটি জনসম্মুখে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *