আত্মপরিচয়ে বলীয়ান ও ঐক্যবদ্ধ থেকে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে উদযাপিত হলো ৪৬তম মহান স্বাধীনতা দিবস। এদিন যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞাও উঠে আসে আমজনতার কণ্ঠে। গতকাল শনিবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।
তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলন শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামের সেই অভিযানে প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
Read More News
দিবসটি উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। লালসবুজের পোশাক পরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সবাই সারবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় খুব সকালে থেকেই অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা অর্পণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশ এগিয়ে যাবে।
পরে ক্রমান্বয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি কূটনীতিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নেতাকর্মী নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আবদুল মঈন খান, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সূর্যোদয়ের মুহূর্তে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ছাড়াও এদিন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, দেশজুড়ে মসজিদ, মন্দির ও প্যাগাডোয় দেশের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলাখানা, সরকারি শিশুসনদসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন পতাকায় সজ্জিত করা হয়। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার থেকে বাংলাদেশের পথপরিক্রমা তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২ দিনব্যাপী জাতীয় সংসদের দণি প্লাজায় শুরু হয়েছে থ্রিডি ভিডিও ম্যাপিং-সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।
এদিকে ৪৫ বছর আগে ২৫ মার্চ কালরাতের দুঃসহ সেই স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গতকাল স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ৩৬ মাইল পথ হাঁটার কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। দিবসটি উপলে ছায়ানট, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় প্রেসকাব, অফিসার্স কাব ঢাকা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে।