সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর আহবান জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনেরও আহবান জানান তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জাতীয় সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। ড. আতিউর ওই ঘটনার দায় নিলে তাকে কেনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতারা। এঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করেন তারা। আজ শুক্রবার এক সভায় নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে খেলা হচ্ছে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আজ বিকেলে রাজধানীর ইনঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা এসব বলেন। জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, মহিলা দলের নূরী আরা সাফা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মুনির হোসেন, দলের ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ।
Read More News
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মাহ ইবরাহিমও বক্তব্য রাখেন। দলের সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও আসাদুল করিম শাহীন সভা সঞ্চালনা করেন। এ ছাড়া দর্শক সারিতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সেলিমা রহমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রশিদ হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে খেলা চলছে। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এটা একটা নাটক হয়েছে, প্রহসন হয়েছে। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেই পার্লামেন্ট কী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত? প্রধানমন্ত্রী কী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। তাই এই পার্লামেন্টে যে আইন পাশ হচ্ছে তা কী জনগণের কোনো কাজে আসবে? নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে যে নির্বাচন কমিশন আছে তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে, সরকারের লোকেরা যা বলছে তার অনুমোদন দেয়া। প্রহসনের নির্বাচনের আগে ইসি বললেন, প্রশাসন কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না। তারপরে নির্বাচনে ২২ জন লোকের প্রাণহানি হলো। জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া হলো।
অথচ ইসি নির্লজ্জভাবে বললেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে! সম্প্রতি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তনুকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য নারী নেত্রীদের জেগে উঠার জন্য আহবান জানান তিনি। জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ যে প্রস্তাব দিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আসুন জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। জনগণের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি এর জন্য সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। বলেন- আজকের দিনে এই হোক আমাদের শপথ। জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাকে অস্বীকার করছে। তাতে কিছু আসে যায় না। ইতিহাস তাকে (জিয়াউর রহমান) ধারণ করেছে। এদেশের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের। তারা ঘোষণা না দিয়ে পালিয়ে গেলেন। তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এ সত্য কথা বলায় শফিউল্লাহকে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তবে সত্য ধ্রুব তারার মত সত্য। সত্যকে কখনও আড়াল করা যায় না।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও দেশ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন দেশের মানুষ তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানুষ যেমন ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন; তেমনি এখন মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ গণতন্ত্র নিয়ে খেলা হচ্ছে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জীবন বাজী রেখে রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। রণাঙ্গনে তার বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকার তাকে বীরউত্তম খেতাব দিয়েছিলো। অথচ ক্ষমতাসীন দল এখন জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকারই করতে চায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নর ড. আতিউরের পদত্যাগকে লোক দেখানো বলে আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন- ড. আতিউর যদি রিজার্ভ চুরির দায় নিয়ে পদত্যাগ করে থাকেন তা হলে তাকে কেনো এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না? রিজার্ভ চুরির ঘটনা সরকার ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলো বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির গত ১৯ মার্চের কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন সরকারের প্রতি আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারের উচিৎ এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয় বলেও তিনি সর্তক করেন। বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ কারণে দেশে এখন সুশাসন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকড হয়নি, চুরি হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় সাবেক একজন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে পরিচিত করতে ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মওদুদ আহমদ এ ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সর্তক থাকার আহবান জানান। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দলকে সুসংগঠিত করে ওই প্রচারণা ব্যর্থ করে দেওয়ার আহ্বাহবা জানান। পাকিস্তানীরা বাংলাদেশকে মেধাহীন করে দিতে চেয়েছিলো বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা। মওদুদ আহমদ সরকারকে গণতান্ত্রিক পথে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা অবৈধ। তাই গণতান্ত্রিক পথে এসে একটি নির্বাচন দিন। তাহলে জঙ্গি ও উগ্রবাদ হবে না। গণতান্ত্রিক পথ ফিরিয়ে আনলে আপনাদের, আমাদের ও জনগণের জন্য ভালো হবে।