বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পরিবেশ দূষণের কারণে শীতকালেও অনেক রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। যেমন : সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিলে প্রদাহ, গলা ব্যথা ইত্যাদি।
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রকোপ বা মাত্রা বেড়ে যায়। শীতে সাধারণত সাইনোসাইটিস, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (নাক দিয়ে পানি পড়া), অ্যালার্জির সমস্যা, টনসিলাইটিস, গলা বসে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, কানের প্রদাহ বেড়ে যায়।
তবে আসলে তাপমাত্রা কোনো সমস্যা না। সাইবেরিয়াতেও কিন্তু মানুষ থাকে। সেখানে তাপমাত্রা মাইনাসে থাকে। আবার সৌদি আরবেও মানুষ থাকে। সেখানে ফোরটি প্লাস তাপমাত্রা থাকে।যখনই ঋতু পরিবর্তন হয় অর্থাৎ গরম থেকে শীত আসতে শুরু করে এটা ক্ষতিকর একটা সময়। আমাদের শরীরের ভেতরে অর্থাৎ টনসিল, নাসিকা, গলা এই বিভিন্ন জায়গাতে অসংখ্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থাকে। যখনই তাপমাত্রা কমে যায় তখন এগুলো বিকশিত হয়। এরপর ইনফেকশন তৈরি করে। সে কারণেই টনসিলাইটিসসহ নাক, কান, গলার এই সমস্যাগুলো হয়। গলা ব্যাথা করে। রোগীর কাছে মনে হয় মাছের কাটা আটকে আছে। গলায় খোঁচা লাগে। এছাড়া বাইরে গ্রন্থি ফুলে যায়। হঠাৎ করে হলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। ব্যাথাও বৃদ্ধি পায়। জ্বরও হতে পারে।
Read More News
যদি এমন লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে সরাসরি এক চামচ লবন, এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দিয়ে গলাটা ভালো করে রিংঝিং করতে হবে। সকালে, দুপুরে এবং রাতে ১৫ মিনিট ধরে করতে হবে। যদি ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে না কমে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যাদের সাইনোসাইটিসের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এ সময়টাতে বেশি বেড়ে যায়।
যাদের টনিক সাইনোসাইটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা, ধুলাবালি এবং অ্যালার্জি প্রকোপ বেড়ে গেলে ইডিমা হয়। নাকের যে ঝিল্লি, সাইনোসাইটিসেরও একই ঝিল্লি। এটি আলাদা কিছু না। তাই আগে থেকে যদি প্রস্তুতি নেওয়া হয়, এন্টাজল জাতীয় ড্রপ নেয় তাহলে রোগী ভালো থাকতে পারবেন। আর যদি সাইনোসাইটিস হয়েই যায় সে ক্ষেত্রে বাষ্প টানতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে এন্টিবায়টিক খাবে।
আসলে অ্যালার্জির কোনো প্রতিকার নেই। অ্যালার্জি কন্ট্রোল করা যাবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণরে মধ্যে রাখা যাবে। প্রথম কথা হচ্ছে তাকে চিহ্নিত করতে হবে যে- কি কারণে তার অ্যালার্জিটা হচ্ছে। কোন খাবার থেকে হচ্ছে, নাকি ধূলাবালি থেকে হচ্ছে, নাকি ঠাণ্ডা থেকে হচ্ছে। এটি খুঁজে পাওয়ার পর সেই হিসেবে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি ধুলাবলি দিয়ে হয় তবে ধুলাবলি পরিহার করতে হবে। যদি ঠান্ডা থেকে হয় তবে ঠান্ডা যাতে না লাগে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
ঠাণ্ডা যাতে না লাগে সেই বিষয়টিতে মানুষ আসলে পরিষ্কার না। যেমন বাতাস থেকে ঠাণ্ডা লাগে, সেরকম কিন্তু আমাদের খাবার থেকেও ঠাণ্ডা লাগে। আর একটা হচ্ছে আমরা যখন বাইরে থেকে ঘরে আসি আর সঙ্গে সঙ্গে এসি চালিয়ে দিই। এই যে তারতম্য ঘটে এ কারণেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। বাইরে থেকে যদি সরাসরি গোসলে চলে যাই তাহলেও ঠাণ্ডা লাগতে হবে।
এ জন্য আমার পরমর্শ হচ্ছে সব সময় আপনাকে গরম থাকতে হবে। গরম খাবার, পানি, গরম থাকতে হবে গোসলের ক্ষেত্রে, ঘরে পরিবেশ যাতে ডাম্প না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আরও একটা বিষয় হচ্ছে যদি অ্যালার্জিটা কাপড় থেকে হয় তবে সুতি জাতিয় কাপড় পড়তে হবে।