দ্য গার্ডিয়ান স্থানীয় সময় আজ রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে গত ১৫ দিনে প্রায় ৪০০ নারী ঝুঁকিপূর্ণভাবে সন্তান প্রসব করেছেন। খাদ্য, পুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে মা-নবজাতক মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণও করেছে।
গার্ডিয়ানের খবরে আরো বলা হয়, মিয়ানমারে সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যাদের মধ্যে ৮০ ভাগই নারী ও শিশু। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় পথিমধ্যেই অনেক গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করছেন।
বিজিবির নৌকায় সন্তান প্রসব করা অসুস্থ সুরাইয়া সুলতানা ও তাঁর নবজাতককে নয়াপাড়া চিকিৎসাসেবা ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। ক্যাম্পের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোমিনুল হক জানান, এ রকম সংকটাপন্ন অবস্থায় আসা অনেক নারীকেই আমরা চিকিৎসা দিয়েছে। এ রকম অবস্থায় আসা রোগীদের অবস্থা খুবই খারাপ। মোমিনুল হক বলেন, আমরা তাদের সেবা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তা আমাদের সাধ্যের বাইরে।
Read More News
শরণার্থী গর্ভবতীদের করুণ পরিণতি বর্ণনা করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার ভিভান তান। তাঁকে নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘুরিয়ে দেখান সেখানকার এক লোক। এরপর ভিভান তান বলেন, ‘ওই লোক আমাদের ছোট একট ঝুড়ির কাছে নিয়ে যান। সেখানে কম্বল দিয়ে ঢাকা ওই ঝুড়ি খুলে তিনি আমাদের দুটি শিশু দেখালেন। অল্প সময় আগেই যমজ ওই শিশুদের মধ্যে একটি এরই মধ্যে মারাও গেছে।
বাংলাদেশ সরকারের গণসংস্থা কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুর কাদির আহমেদ বলেন, শরণার্থী এসব রোহিঙ্গা নারী তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না। পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও পুষ্টিহীনতার কারণে তাঁদের বুকে দুধ আসে না।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুই পাশেই নারী ও শিশুদের জরুরি সাহায্য ও নিরাপত্তা দরকার। যদিও মিয়ানমার তাদের অংশে যেকোনো সাহায্যকারী সংস্থার কর্মীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় দেশটির নেত্রী অং সান সু চির কঠোর সমালোচনাও করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সীমান্তবর্তী এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। মিয়ানমারে যে রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, এ বিষয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির নীরব ভূমিকা সারা বিশ্বেই সমালোচিত।