কুমিল্লায় দুই শিশুহত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি ওই দুই শিশুর সৎভাই মো. আল সফিউল ইসলাম ওরফে ছোটন (২২)। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে তার মায়ের অনুমতি না নিয়েই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর বাবা ও সৎমা তাদের সঙ্গে (সফিউল, তার বোন ও মা) খারাপ আচরণ শুরু করেন। তার বোনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন। তার মা বাড়ি এলে থাকতে দিতেন না। ফলে তার মা পথে পথে ঘুরে বেড়ান। তার পড়াশোনার খরচ কমিয়ে দেন। সর্বশেষ পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হবে বলে তিনি জানতে পারেন।
তাই মাকে মর্যাদা না দেয়া ও পারিবারিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি দুই ভাইকে খুন করেন। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই তিনি গত শনিবার দুপুরে রশি দিয়ে বেঁধে ও বালিশ চাপা দিয়ে জয় ও মনিকে হত্যা করেন।কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আল সফিউল। সেখানেই তিনি উল্লিখিত কথাগুলো বলেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আইয়ুব। পরে আদালত তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়। গত শনিবার কুমিল্লা শহরের রসুলপুর এলাকায় খুন হয় মেহেদী হাসান জয় (৮) ও মেজবাউল হক মনি (৬) নামের আপন দুই ভাই। এরপর গতকাল সোমবার রাত ১০টায় রাজধানীর শান্তিনগরের টুইন টাওয়ারের সামনে থেকে সফিউলকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা জেলা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও সদর দক্ষিণ মডেল থানা-পুলিশের একটি যৌথ দল। গ্রেফতারের পর রাত ৩টায় তাকে কুমিল্লা জেলা ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে অকপটে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
Read More News
একই সঙ্গে পারিবারিক নানা যন্ত্রণা ও কলহের কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন গতকাল সকাল ১১টায় নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে তার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর আসামি সফিউল গণমাধ্যমের কর্মীদের উদ্দেশে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে দেয়নি। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।অভিযোগ প্রসঙ্গে আসামির বাবা আবুল কালাম আবু বলেন, প্রথম স্ত্রীর বেপরোয়া চলাফেরার কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হই। তাকে আমি তালাক দিয়ে বিয়ে করি। ছেলের পড়াশোনার খরচ নিয়মিত আমিই দিই। ছেলে এবং মেয়েরা আমার সঙ্গেই থাকে। প্রথম স্ত্রী তাবলিগ করার কারণে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন।কীভাবে তালাক দিয়েছেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মৌখিক তালাক দিয়েছি। কোনো ধরনের কাগজপত্র নেই। ছেলের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে বলেন, ছোটনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। নৃশংসভাবে আমার দুই ছোট্ট শিশুকে সে খুন করে। এটা ক্ষমাহীন অপরাধ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক বলেন, এর আগে মামলার দুই সাক্ষী গ্রেফতার হওয়া আসামি সফিউলের আপন বোন সুফিয়া আক্তার তানজিনা ও জ্যাঠাতো বোন মুক্তা আক্তার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।